শীতের চাদর সরিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকত যে একফালি মিঠে রোদ , ঠিক গিয়ে পড়ত নাকবরাবর রাখা আমার বইয়ের টেবিলে আর আঁকিবুকি কাটত সাদা দেওয়ালে জুড়ে, সে কদিন হলো আর আসছে না. তার এবার দিক বদলের পালা শুরু, গুটি গুটি পায়ে সরে গিয়ে সে বসন্তের আগমনী জানান দিচ্ছে .
আমার স্কুল থেকে ফেরার রাস্তাটাও তখন নানা রঙে সাজার অপেক্ষায় . পলাশ , শিমুল , অশোক আর কত কিছু .
বাম্মার ঘরের পুবের জানলার ঠিক বাইরে সারা বছর একলা দাঁড়িয়ে থাকা সজনে ফুলের গাছটাও তখন বসন্তের তালে তাল মেলাতে ব্যস্ত. তার গা ভরা থোকা থোকা সাদা কুঁড়ির গয়না. আমি বিছানায় শুয়ে গুনতাম, আর কটা নতুন কুঁড়ি এলো.
কবে থেকে ঠিক জানা নেই, বসন্তের প্রতিচ্ছবি শুধু পলাশ, শিমুলের হয়ে থাকেনি, সে সজনে ফুলের শুভ্রতার সাথে মিশে গেছে.
বসন্তের কোনো এক সকালে যখন চলে যাবার পথে রোদ এসে পড়ে আমার আধুনিক মডুলার রান্নাঘরে, শেষবারের জন্য আঁকিবুকি কাটে ছেলেবেলার মতোই, সেইরকম একটা বসন্তের মন রাঙানো দিনে আমার ইচ্ছে জাগে সজনে ফুলের বেশ্বরী রান্না করার.অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী সেই নিথর শিলনোড়া বার হয় এক নির্জন কোণে থেকে, মশলা বাটি, দুপুর গড়ায় , রান্না নামাই আর কলাই করা থালায় বেড়ে দিই. দেরাজ থেকে কেমেরা বার করি , ক্লিক ক্লিক.
সজনে ফুলের বেশ্বরী, আমি আর একটা নিস্তব্ধ দুপুর.
সজনে ফুলের বেশ্বরী. সজনে ফুল আর বাটা ঝালের মশলার এক অনবদ্য মেলবন্ধন. অতি পুরনো একটি রান্না. উত্তরবঙের রাঢ় অঞ্চলে আজও এই বাটা ঝালের মশলার প্রচলন খুব দেখা যায়.
সজনে ফুল থাকতে থাকতে এই রান্না করেই নিতে পারেন.

সজনে ফুলের বেশ্বরী
Ingredients
- ২ কাপ সজনে ফুল ডাটা ছাড়িয়ে, ধুয়ে জল ঝরানো
- ১ মাঝারি আকারের বেগুন ছোট ডুমো করে কাটা
- ২ মাঝারি আকারের আলু ছোট ডুমো করে কাটা
- ১৫-২০ বড়ি ভাজা
- ২ চা-চামচ গোটা জিরা
- ১/৪ চা-চামচ গোটা জিরা
- ১.৫ চা-চামচ গোটা গোলমরিচ
- ২-৩ তেজপাতা
- ১/৩ কাপ সর্ষের তেল
- ১ টেবিল চামচ ঘি
- ১/২ চা-চামচ চিনি
- নুন স্বাদ অনুযায়ী
Instructions
- জিরে আর গোটা গোলমরিচ ভিজিয়ে রাখুন বেশ কিছুক্ষণ. তারপর মিহি করে বেটে রাখুন.
- গোবিন্দভোগ চাল ভিজিয়ে রেখে মিহি করে বেটে রাখুন.
- ভাজা বড়িগুলো হালকা হাতে ভেঙে রাখুন.
- কড়াইয়ে ৩ -৪ টেবিল চামচ তেল গরম করুন. বেগুন ভেজে তুলে রাখুন.
- কড়াইয়ে বাকি তেল আর আধা টেবিল চামচ ঘি দিন, গরম হলে জিরে, তেজপাতা ফোড়ন দিন. সুগন্ধ বেরোলে আলু ভাজুন , একটু লালচে আর নরম করে.
- বাটা মশলা দিয়ে একটু জল ছিটিয়ে দিন, চিনি দিন, কষাতে থাকুন আর মিনিট পাঁচেক.
- তাতে ভাজা বেগুন আর সজনে ফুল মিশিয়ে দিন. কম আঁচে ২-৩ মিনিট রান্না করুন.
- চাল বাটায় অল্প একটু জল দিয়ে একটা গোলা তৈরি করুন. কড়াইয়ে ঢেলে, কম আঁচে রান্না করুন আর কিছুক্ষণ. দরকার হলে একটু জল ছিটিয়ে দিন. ঘন হয়ে এলে ভাজা বড়ি আর বাকি ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন.
Leave a Reply