করিমগঞ্জে আমাদের বাড়ির সামনে লোহার গেট—একদিকে ঝাঁকিয়ে ফুটত হলুদ অলকানন্দা, আর অন্যদিকে মাধবীলতা।
বিকেল হলেই সেই ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত গেট পেরিয়ে উঠোন পর্যন্ত, আর সকালের রোদে পাতাগুলোর ছায়া পড়ে থাকত সিঁড়ির গায়ে।
পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে দুটো সিঁড়ি নেমে এক চিলতে উঠোন পেরোলেই ডানদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা বাগান।
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই গোপাল ঠাকুরকে জল-বাতাসা দিয়ে বাগানে যেতো বাম্মা, হাতে থাকত বহুদিন ব্যাবহার হওয়া পুরোনো শাড়ির তৈরি থলে. স্কুল না থাকা দিনগুলোতে ঘুমভাঙা চোখে পিছু নিতাম আমি.
কোন গাছের নতুন পাতা এসেছে, কোন পাতার রং বদলেছে কি না, কোন শাকের পাতা কখন তুলতে হয় , কোনটা আগলে রাখতে হয় আরও কয়েক দিন, কার গোড়ায় পোকা ধরেছে , সবই ছিল তাঁর নখদর্পণে। এসব ছিল না কোনো বইয়ে শেখা, মাটি ছুঁয়ে, গাছ দেখে, বোঝা এক অভিজ্ঞতা।আমি পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ভাবতাম, বাম্মা কি তবে আমাদের মনের কথার মতো গাছেদের ও মনের কথা বুঝতে পারে?
এই যে গাছেদের সঙ্গে বাম্মার যেন এক অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল. হয়তো এইটাই ছিল রান্নার গোপন সুর। রান্নার স্বাদ শুধু তেল-মশলা দিয়ে হয় না, তার শুরু সেই গাছের শিকড় ছুঁয়ে।
পুঁই শাক গাছগুলো বাঁশের বেড়ার পাশে চুপচাপ, পাতাগুলোয় গায়ে একরকম ঘন সবুজ ছায়া.
লাল শাক লাগানো হয়েছে আর একটু গাঢ় রোদের জায়গায়, দাদার আর আমার কাছে ওটা ছিল ‘ম্যাজিক শাক’.
ডানপাশে বেশ কিছু ডাঁটাশাকের গাছ, তার পাশের এক কোণে নাতিদীর্ঘ ধুঁধুঁল লতা।
আর এক কোণে বেড়ে ওঠা লাউয়ের লতা চলতো তার নিজস্ব নিয়মে। বাঁশের কঞ্চি বেয়ে, বাঁধা মাচায় উঠে ছড়িয়ে যেত শাখা প্রশাখায়।
খুব যত্নে ছাঁটা হতো লাউ শাকের কচিপাতা আর ডগা, যাতে গাছের ফলনের উপর কোনও প্রভাব না পড়ে। আর তখন বাম্মার আঙুলে লেগে থাকত একরকম সোঁদা গন্ধ. মাটির, শিশিরের আর হয়তো বা ভোরের ।
সেই কচিপাতা আর লাউয়ের ডগা দিয়ে রান্না হতো নরম লাউডগা ইলিশ ঝোল. কোনো মশলার আধিক্য নয়, শুধু একটু জোয়ান, আর সামান্য জিরে বাটা, কখনো কাঁঠাল বিচিও সঙ্গী হতো লাউ ডগার.

লাউডগা ইলিশ
Ingredients
- ৪-৫ টুকরো ইলিশ মাছ
- ৪-৫ টা লাউডগা
- ৮-১০ টা লাউপাতা
- ৮-১০ টা কাঠাল বিচি
- ৩-৪ টা কাঁচালংকা চেরা
- এক চিমটি জোয়ান
- এক চিমটি কালোজিরা
- ১/২ চা-চামচ জোয়ান
- ১ চা-চামচ জিরা
- ১/২ চা-চামচ হলুদ গুঁড়ো
- ৪ টেবিলচামচ সর্ষের তেল
Instructions
- লাউপাতা কুচি করে কেটে নিন. লাউয়ের ডগা ধুয়ে রাখুন.
- কাঠাল বিচি খোসা ছাড়িয়ে, নরম করে সেদ্ধ করে নিন. লম্বা দু টুকরো করে নিন.
- ১/২ চা-চামচ জোয়ান আর ১ চা-চামচ জিরা একসাথে গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন. একটা কাঁচালংকা দিয়ে মিহি করে বেটে নিন.
- একটু হলুদ ও নুন দিয়ে ইলিশ মাছ ভালো করে মেখে রাখুন.
- কড়াইয়ে ৩ টেবিল চামচ সর্ষের তেল গরম করুন. ইলিশ মাছ খুব হালকা ভেজে তুলে রাখুন.
- ঐ তেলে এক চিমটি জোয়ান, এক চিমটি কালোজিরা, বাকি কাঁচালংকা, ফোড়ন দিয়ে ভালো গন্ধ বেরোতে, সেদ্ধ করা কাঠাল বিচি , বাকি হলুদ গুঁড়ো দিয়ে একটু ভাজা হয়ে গেলে, লাউডগা আর বাটা মশলা দিন . ঢাকা দিয়ে রান্না করুন মিনিট পাঁচ-সাতেক.
- তারপর কুচনো লাউপাতা দিয়ে দিন, মিনিট পাঁচেক পর ১/২ কাপ গরম জল দিন. ভাজা মাছ আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে দিন. মিনিট পাঁচেক কমআঁচে রান্না করুন. বাকি সর্ষের তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নিন.
লাউডগা ইলিশ. জোয়ান আর জিরে বাটা দিয়ে কাঁঠাল বিচিও , লাউডগা আর ইলিশের এই অনবদ্য স্বাদের ঝোল খেয়ে দেখুন. আমি নিশ্চিত, ভালো লাগবে.
ইলিশের আরও অনেক রান্নার প্রনালী জানতে চাইলে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন.
Leave a Reply