সেই একলা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সজনে ফুলের গাছটা, কিছুদিন পর ফুলে ফুলে ছেয়ে গেলে, তার পাতা আর দেখাই যেত না. বাম্মার বারণ ছিল গাছে চড়ে ফুল তুলে আনা যাবে না, তাই ঠিক সন্ধ্যে নামার আগেই দিদি গাছের গোড়া পেঁচিয়ে নিয়ে একটি সাদা রঙের কাপড় বিছিয়ে দিত.
সেই কাকভোরে যখন ভোলাকাকু সাইকেলে চেপে দুধ নিয়ে আসত, তার টিং টিং ঘন্টায় ঘুম ভেঙেই দাদাতে আর আমায় মিলে একছুটে পেছনের বাগানে, ঝরে পড়া ফুল তুলে আনতাম.
বাম্মা , সজনে ফুলের মালা গেঁথে দিই তোমার গোপালের জন্য ?
এ ফুলের কি আর মালা হয় রে দিদিভাই ?
এত সুন্দর ফুল , তার কেনো কেউ মালা করে দেয় না? তার নান্দনিক সৌন্দর্য কি মানুষের মনে ঠিক দাগ কাটে না? নাকি তার কাজ শুধু খাবারের পাতের শোভা বাড়িয়ে তোলা ?
কিছুদিনের মধ্যে ফুলের মাঝে ঘন সবুজ রঙের লতানো কচি ডাটার উুকিঝুকি. আর কেমন দুলতে দুলতে হাওয়ায় ছন্দে তার তাল মেলানো.
পুরনো আলগা মই বেয়ে যেই মানিককাকা কচি একআটি ডাটা নিয়ে এলো. একছুটে মানিককাকার পিছু নিলাম আমি.
আমায় একটা দাও না গো.
বছরের প্রথম ফলন গো দিদি , মা লক্ষ্মীর ভোগে লাগবে যে. একটাই দিচ্ছি এবার.
আমি খুশিমনে সেই ডাটার হাঁসুলী পরিয়ে দিলাম পুতুলের গলায়.
কি বোকা রে বনু তুই. এ আবার কেমন গয়না ?
দাদার মুখে মুচকি হাসি.
আমার চোখ ছলছল অভিমানে.
সেইরকম একটা ছুটির দুপুরের বাম্মার পাশে বসে মা সজনে ডাটা চিংড়ি রান্না করলো.
অনেক বসন্ত পেরিয়ে এসে আজ বুঝি, মানুষ ভালবাসে বলেই, একবুক আন্তরিকতা নিয়ে নানা রকমের পদ তৈরি করে , আর সেটা প্রিয়জনের পাতে তুলে দেয়. ভালোবাসার কি আর একরকমের হয়?
বসন্তের এক মনোরম সকাল. দূর থেকে ভেসে আসা কোকিলের কলতান. জীবনানন্দ দাশের কবিতা.
“এলোচুল ছড়ায়ে রেখেছে ঢেকে গূঢ় রূপ—আনারস বন;
ঘাস আমি দেখিয়াছি; দেখেছি সজনে ফুল চুপে চুপে পড়িতেছে ঝ’রে মৃদু ঘাসে;”
সময় গড়ায়. আমি দার্জিলং চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে , তিলের বাটা দিয়ে সজনে ডাটা চিংড়ি রান্না করি.

সজনে ডাটা চিংড়ি
Ingredients
- ১০-১২ টা মাঝারি আকারের চিংড়ি
- ২ টা মাঝারি আলু লম্বা করে কাটা
- ৭-৮ টা কচি সজনে ডাটা ১.৫ “ করে কাটা
- ১/২ কাপ দুধ
- ২ চা-চামচ আদা বাটা
- ১/২ টেবিল-চামচ তিল বাটা তিল শুকনো খোলায় হালকা ভেজে নিয়ে মিহি করে বেটে নিন
- ১/২ চা-চামচ হলুদ গুঁড়ো
- ১ চা-চামচ জিরেঃ মেথিঃ সর্ষে ১ : ১ : ১ মেশানো
- ২-৩ তেজপাতা
- ৫-৬ কাঁচালংকা চিরে রাখা
- ৪ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
- ১ চা-চামচ ঘি
- নুন স্বাদ অনুযায়ী
- ১/৪ চা-চামচ চিনি
Instructions
- চিংড়ি মাছ ভালোভাবে পরিষ্কার করে, পেছনের কালো শিরা ছাড়িয়ে নিন. ধুয়ে নিন.
- হালকা হলুদ ও নুন দিয়ে ভালো করে মেখে রাখুন.
- কড়াইয়ে ২ টেবিল চামচ তেল গরম করুন. চিংড়ি মাছ হালকা ভেজে তুলে রাখুন.
- বাকি তেল দিয়ে , তাতে তিন ফোড়ন আর তেজপাতা দিন. ভালো গন্ধ বেরোতে আলু , এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো ও নুন দিয়ে ৫-৭ মিনিট ভাজুন.
- সজনে ডাটা দিয়ে দিন, আর কম আঁচে রান্না করুন কিছুক্ষণ.
- আদাবাটা আর তিলবাটা, কাঁচালংকা মিশিয়ে দিন এবং আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন.
- ১/২ কাপ গরম জল আর দুধ দিয়ে দিন. ভাজা চিংড়ি মাছ আর চিনি দিন. কম আঁচে ৫-৭ মিনিট রান্না করুন.
- ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন
সজনে ডাটা চিংড়ি. তিলেবাটা দিয়ে সজনে ডাটা আর চিংড়ির এক অভুতপূর্ব যুগলবন্দী. মন ভালো করে দেয়া অতি পুরাতন একটা পদ.
Leave a Reply